টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন নোয়াখালী প্রায় ২০ লাখ মানুষ। অল্প কিছু এলাকাতে পানি কমলেও তা খুবই ধীরগতিতে। এখনো তলিয়ে আছে পথ-ঘাট, ঘরবাড়ি। জেলায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। ঠিক সেই মুহূর্তে বন্যার্ত মানুষের পাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। নোয়াখালীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার বানভাসি মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে বানভাসি মানুষের মাঝে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
২১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া কার্যক্রমটি এখন পর্যন্ত চলমান। বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বন্যা মোকাবেলায় এক হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য খুলে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম ভবন। অডিটোরিয়ামে তাদের প্রতিদিনের খাবারের জন্য এগিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ত্রাণ প্যাকেটিং করে ক্যাম্পাসের বাসে করে বন্যা কবলিত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমানে নোবিপ্রবির অডিটোরিয়ামে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে প্রায় ৩০০ বানভাসি মানুষ। এদের চিকিৎসা এবং পানিতে আটকে পড়া গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ রোগীদের উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪ জন নবজাতক শিশু জন্ম নিয়েছে।
এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংগঠন, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও মেডিকেল টিম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব তহবিল গঠন করে বন্যার্তদের ত্রাণ সহযোগিতা পৌঁছে দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বন্যা কবলিত ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি টিম কাজ করছে। এছাড়া নোয়াখালীর সর্বস্তরের ছাত্রসমাজের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি।
নোবিপ্রবি ব্লাড ব্রিগেডের সভাপতি রাকিব রহমান বলেন, ‘নোবিপ্রবির ক্লাবগুলো উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে খাওয়ানো ও ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রেখেছি। আমাদের এখানে আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপত্তায় আছে নোবিপ্রবি বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের দক্ষ সদস্যগণ। ২১ আগস্ট থেকে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে আনুমানিক ২৫০ জনের মতো মানুষ আছে। ৪ জন শিশু আমাদের তত্ত্বাবধানে আছেন। আমরা আমাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছি। আমাদের ফান্ডিং ১০ লাখ টাকার মতো উঠেছে, এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নিলো শিশু, নাম রাখা হলো ফাতিন
তিনি আরও বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা ১৪ টন খাবার কিনে ডিস্ট্রিবিউট করেছি। আরও ১০ টন খাবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে। সব মিলিয়ে মোট ২৪ টন খাবার আমরা ত্রাণ হিসেবে সরবরাহ করেছি। আমাদের আশপাশে ৩৪টা এলাকা থেকে মানুষ আসছে। আমাদের মেডিকেল টিমের কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আমরা আশপাশে সার্ভে করে তাদেরকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো।’
ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফেনী এবং নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জায়গা থেকে বন্যার্তদের মাঝে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বানের পানিতে আটকে পড়া বন্যার্তদের উদ্ধার থেকে শুরু করে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে সাহায্য করা, আশ্রয়কেন্দ্র খাবার সরবরাহ, ওষুধ সরবরাহসহ সব কার্যক্রমে আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় এবং পরে নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি আমরা। আমাদের উদ্দেশ্য কোনো মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে কিংবা আশ্রয়হীন না থাকে। আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদেরকে চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া এবং ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও পরিচালনা করেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ত্রাণ সামগ্রী যাতে সঠিক জায়গায় পৌঁছে যায় সেই প্রচেষ্টায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মো. আবদুল্লাহ আল নাঈম বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয় বৃহত্তর নোয়াখালীর সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই আমারা সবসময় চেষ্টা করবো এই অঞ্চলের মানুষের যেকোনো বিপদে তাদে পাশে পরিবারের সদস্যদের মত পাশে দাঁড়ানোর।’