Tue. Sep 24th, 2024

যুক্ত যমজ শিফা-রিফা এখন আলাদা

১০ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের পর বুক ও পেট জোড়া লাগানো যমজ শিশু শিফা-রিফাকে পৃথক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৮২ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে শুরু হওয়া অস্ত্রোপচার হয় ১০ ঘণ্টাব্যাপী।

সফল অস্ত্রোপচারের বিষয়টি জানাতে গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. শাহানূর ইসলাম এ তথ্য জানান।

অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক সাহানুর ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় দেড় বছর বয়সী শিফা ও রিফার অস্ত্রোপচার হলেও ভালো নেই রিফা। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় রিফাকে পিআইসিইউতে রাখা হয়েছে ও শিফা মায়ের কোলে ভালোই আছে।

বরগুনা জেলার বেতাগী থানার মাহমুদা ২০২৩ সালের ৭ জুন বুক-পেটে জোড়া লাগানো অবস্থায় জমজকন্যা শিশুর জন্ম দেন। পরে চলতি বছরের ২১ জুন তাদের ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। এরপর ছয় মাস পর অপারেশনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তাদের শরীরে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক থাকলেও বুক ও পেট জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় দুই জনের হৃৎপিণ্ডের পর্দা, সাধারণ যকৃত নালী, পোর্টাল শিরা, ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ এক অন্যের সঙ্গে জোড়া লাগানো রয়েছে। টিস্যু বর্ধিতকরণের পর মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৭ সেপ্টেম্বর ১০ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। অপারেশন শেষে দুই জনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিই) ভেন্টিলেশন দিয়ে রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ও ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করা হয়। পরে ১১ সেপ্টেম্বর সকালে শিফার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয়। তবে তার অবস্থা বর্তমানে উন্নতি হওয়ায় আজকেই কেবিনে দেওয়া হতে পারে।

ডা. শাহানূর বলেন, আমাদের এই অপারেশনে ৮২ জনের একটি টিম ছিল। পরিবারটি অনেক গরিব তাই তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। চিকিৎসার খরচ বহন করে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেম, ট্র্যান্সফিউশন মেডিসিন ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন।

হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে শিফা ও রিফার বাবা বাদশা বলেন, জোড়া লাগানো মেয়েদের চিকিৎসায় সব ধরনের সেবা আমি ফ্রি পেয়েছি। এক বছর ধরে ডাক্তার নিজের পকেট থেকে অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছেন এবং আমার মেয়েদের চিকিৎসা করেছেন। যারা চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল আলম, বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *