দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সবসময় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায় সেনাবাহিনী। এবারও আকস্মিক বন্যায় সেনা সদস্যরা দুর্গতদের সহযোগিতায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সারাদিন উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে হাজারো মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এ বাহিনী। এ ছাড়া নৌবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় সেনা ও নৌবাহিনীর সব পদবির সদস্যদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়েছে। দুর্গত এলাকার বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার ছাড়াও তাদের পরিবার পরিজনের কাছে তাদের সর্বশেষ অবস্থা জানানোসহ জরুরি নানা সহযোগিতার প্রয়োজন হচ্ছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় অনেকে তাদের স্বজনের খোঁজ পাচ্ছেন না। মাঠ পর্যায়ে সেনাবাহিনীর যারা উদ্ধার অভিযানে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে বন্যাদুর্গতদের উদ্বিগ্ন স্বজনের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। ন্যাশনাল হেল্প লাইন, মেইল বা ফোনে বন্যাদুর্গতদের ব্যাপারে কেউ কোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে তা আইএসপিআরের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেটি সেনাবাহিনীর মাঠ সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেয়।
আইএসপিআর জানায়, বন্যায় প্লাবিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। এরই মধ্যে চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপৎসীমার ২ থেকে ৬ ফুট অতিক্রম করায় আশপাশের এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। গতকাল সারাদিন উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার খাগড়াছড়িবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনী। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানরত অসহায় মানুষদের রান্না করা খাবার দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুকনা
খাবার, মোমবাতি, দেয়াশলাই, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত রাখবে সেনাবাহিনী।
চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়ে নিরলসভাবে পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাঁচটি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। ২১ আগস্ট থেকে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে মোতায়েন রয়েছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় এ পর্যন্ত আনুমানিক ৬ হাজার বন্যাদুর্গতকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ চলমান। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বন্যার্তদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর্থিক সহায়তা প্রদানে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ‘লজিস্টিকস এরিয়া রিলিফ ফান্ড’ হিসাব নম্বর ০০১৮-০২১০০১০১১০, দি ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, র্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল শাখার অনুকূলে অনুদান প্রদান করতে পারবেন অথবা বিকাশ-এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিকাশ নম্বর– ০১৭৬৯-০১৩৮৫৮। প্রয়োজনে– ০১৭৬৯-০১৩৬০৪ ও ০১৭৬৯-০১৩৫৩০ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া ঢাকায় ত্রাণসামগ্রী প্রদানের জন্য সেনাবাহিনী ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র; লজিস্টিকস এরিয়া, ঢাকা সেনানিবাসে যোগাযোগ করা যাবে।
সেন্ট্রাল অর্ডন্যান্স ডিপো (সিওডি), মিলিটারি উইংয়ে (হোটেল র্যাডিসন ব্লু-সংলগ্ন) যোগাযোগের নম্বর– ০১৭৬৯-০৫১৮১৯, ০১৭৬৯-০১৩৮৩২, ০১৭৬৯-০১৩৫৩০ ও ০১৭৬৯-০১৩৬০৪। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা প্রদানে আগ্রহী হলে নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। ফেনী ০১৭৬৯-৩৩২০৩২ ও ০১৭৬৯-৩৩২১৭৮; চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ০১৭৬৯-২৪৪০১২; সীতাকুণ্ড-মীরসরাই ০১৭২৮-২০২৬৭৭, ০১৭৬৯-২৪২১৩২ ও ০১৭৬৯-২৪২১২৮; খাগড়াছড়ি ০১৭৬৯-৩০২৩৪২ ও ০১৭৬৯-৩০২৩৩৬; ফটিকছড়ি ০১৭৬৯-২৭২৩৪২ ও ০১৭৬৯-২৭২৩৩৬; মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ ০১৭৬৯-১৭০০০৬।
খাদ্য সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বিস্কুট, চিড়া, গুড়, খেজুর, বান ও পাউরুটি, নুডলস, খাবার স্যালাইন, গুঁড়া দুধ, চিনি ও খাবার পানি এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে দেয়াশলাই ও মোমবাতিকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর জরুরি নম্বর মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলা ০১৭৬৯-১৭৫৬৮০ ও ০১৭৬৯-১৭২৪০০; কুলাউড়া, জুরি, বড়লেখা, মৌলভীবাজার ০১৭৬৩-৯০১৬৯৮; হবিগঞ্জ ০১৭৬৯-১৭২৫৯৬ ও ০১৭৬৯-১৭২৬৩৪; ফেনী ০১৭৬৯-৩৩৫৪৬১, ০১৭৬৯-৩৩৫৪৩৪, ০১৬১৪-৪০৯৫৬৫ ও ০১৯১৯-৭৭৪৮৪০; চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ০১৭৬৯-২৪৪০১২; সীতাকুণ্ড-মিরসরাই, চট্টগ্রাম ০১৭২৮-২০২৬৭৭, ০১৭৬৯-২৪২১৩২ ও ০১৭৬৯-২৪২১২৮; ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম জেলা ০১৭৬৯-২৭২৩৪২ ও ০১৭৬৯-২৭২৩৩৬; খাগড়াছড়ি ০১৭৬৯-৩০২৩৪২ ও ০১৭৬৯-৩০২৩৩৬।