Sun. Aug 25th, 2024

ইসলামে তারুণ্যের অগ্রাধিকার

ইসলামে তারুণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তারুণ্য মানুষের জন্য এক অফুরন্ত নিয়ামত ও সুমহান সুযোগ। এই নিয়ামত ও সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করা জরুরি। তারুণ্যকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালীন জীবনে মুক্তির মিনারে উপনীত হওয়া যাবে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

কাজেই তরুণকালে নিজেদের চরিত্রকে কলুষিত না করে আলোকিত মানুষ হওয়ার গৌরব অর্জন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
একদল তরুণের অলৌকিক মর্যাদা : আনুমানিক ২৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমান সম্রাট ডিসিয়াসের শাসনকালে (২৪৯-২৫১) একদল তরুণকে ধর্মত্যাগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পৌত্তলিক রোমান সাম্রাজ্যে তাদের জোর করা হয় পুরনো দেবদেবীদের বিশ্বাসে ফিরে যেতে। তারা তা প্রত্যাখ্যান করে।

রাজা তাদের বিদ্রোহের কথা শুনে খুব রেগে যান এবং তাদের হত্যা করার আদেশ জারি করেন। তারা অক্লন পাহাড়ের এক গুহায় আশ্রয় নেয় এবং প্রার্থনা শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাদের পৃথিবীর ইতিহাসে এক অলৌকিক মর্যাদা প্রদান করেন। তারা ৩০০ বছরের অধিক সময় ঘুমিয়ে থাকে।
যখন তারা জেগে ওঠে, তাদের কোনো ধারণা ছিল না যে তারা কয়েক শতাব্দী ধরে ঘুমিয়েছে। বরং তারা ভেবেছিল যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েছে। তারা তাদের একজনকে খাবার কিনতে পাঠালে দোকানদার এত পুরনো মুদ্রা দেখে অবাক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে গুহায় তাদের কাটানো সময়ের বাস্তবতা প্রকাশ পায়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী)! আমি তোমার কাছে তাদের সঠিক বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছি, তারা ছিল কয়েকজন তরুণ, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম।’
(সুরা : কাহফ, আয়াত : ১৩)

ইবাদতে কাটানো তরুণের বিশেষ প্রতিদান : তারুণ্যের ইবাদত আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন। আল্লাহর ইবাদতে তারুণ্য কেটেছে— এমন বান্দাদের পরকালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় আশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ সাত ধরনের ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার (আরশের) ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক। দুই. এমন তরুণ যে রবের ইবাদতে গড়ে উঠেছে…।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪২৩)

তারুণ্যকে মূল্যায়ন : রাসুলুল্লাহ (সা.) তারুণ্যকে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে তা মূল্যায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে তরুণ সমাজের দুরবস্থা ও নৈতিক অধঃপতন ঠেকাতে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলা খুবই জরুরি। সব অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘পাঁচটি বস্তুকে মূল্যায়ন করো পাঁচটি বস্তু আসার আগে—(১) তোমার তারুণ্যকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্য আসার আগে; (২) সুস্বাস্থ্যকে মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে; (৩) সচ্ছলতাকে মূল্যায়ন করো দারিদ্র্য আসার আগে; (৪) অবসরকে মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে আর (৫) জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে।’ (মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ১৭৯৪)

কিয়ামতে জবাবদিহি : কিয়ামতে সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। জীবন-জীবিকার জবাবদিহির মধ্যে তারুণ্যকালের বিশেষভাবে হিসাব দিতে হবে। কারণ সেটিই জীবনের সোনালি সময়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে সরতে পারবে না। (১) তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে; (২) তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে; (৩) তার ধনসম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং (৪) কী কী খাতে তা খরচ করেছে এবং (৫) সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে।

(তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)

জ্ঞানার্জনে উৎসাহ : তারুণ্যই হলো জীবন গঠনের মোক্ষম সময়। এ সময় আল্লাহর ইবাদত বন্দেগির সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী হওয়া চাই। মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনে একবার পথহারা হলে ক্ষতিপূরণ প্রায় অসম্ভব। জায়েদ বিন সাবিত (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় এলে আমার বাবা আমাকে নিয়ে তাঁর কাছে যান। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এই কিশোর বনু নাজ্জার গোত্রের সন্তান। এরই মধ্যে সে আপনার ওপর মহান আল্লাহর অবতীর্ণ কোরআনের প্রায় ১০টি সুরা মুখস্থ করেছে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) খুবই মুগ্ধ হলেন। তিনি বলেন, ‘হে জায়েদ, তুমি আমার জন্য ইহুদিদের কিতাব শিখে নাও। আল্লাহর শপথ, আমি নিজের কিতাবের ব্যাপারে ইহুদিদের নিরাপদ মনে করি না।’ জায়েদ (রা.) বলেন, অতঃপর আমি তাদের কিতাব শিখতে শুরু করলাম। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই আমি তাতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করলাম। আমি রাসুল (সা.)-কে তাদের পাঠানো চিঠিপত্র পড়ে শুনাতাম। তাঁর পক্ষ থেকে চিঠির উত্তর দেওয়া হতো। (বুখারি, হাদিস : ৭১৯৫)

পরিশেষে বলা যায়, জীবনের সোনালি সময় তারুণ্যের সঠিক ব্যবহার মানুষকে সফল করে। সে ক্ষেত্রে ইসলামের ছোঁয়া পেলে তা আরো সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। কারণ ইসলামে রয়েছে তারুণ্যের নানামুখী অগ্রাধিকার।

আরও দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *